
বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (এফডিসি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে নিয়োগ পেয়েছেন চলচ্চিত্র নির্মাতা মাসুমা রহমান তানি। গত বুধবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের চুক্তি ও বৈদেশিক নিয়োগ শাখা থেকে উপসচিব আবু সালেহ মো. মাহফুজুল আলম কর্তৃক স্বাক্ষরিত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে তানির নিয়োগের কথা জানানো হয়।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, দ্য ফিল্ম ডেভলপমেন্ট করপোরেশন অ্যাক্ট ১৯৫৭-এর ধারা ৯ ও ৯(ডি) অনুযায়ী মিজ্ মাসুমা রহমান তানিকে অন্য যে কোনো পেশা, ব্যবসা, কিংবা সরকারি, আধা-সরকারি, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান/সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে যোগদানের তারিখ থেকে ৩ বছর মেয়াদে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি)-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ প্রদান করা হলো।
মাসুমা রহমান তানির নিয়োগ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন প্রকাশের পর চলচ্চিত্রের কয়েকজন সামাজিক মাধ্যমে তাকে যুবলীগের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ এনে এ নিয়োগ বাতিলের দাবি জানায়। এছাড়া মাসুমা রহমান তানির নিয়োগ বাতিল চেয়ে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংসদ জাসাসের পক্ষ থেকে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়। নামসর্বস্ব কয়েকটি অনলাইন পোর্টালে তানিকে যুবলীগ নেত্রী পরিচয় দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে আমার দেশ’র পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হয় মাসুমা রহমান তানির সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমার কিছু বলার এখতিয়ার নেই। সময় সব প্রমাণ দেবে।’
গত বৃহস্পতিবার খবরের কাগজে মাসুমা রহমান তানির একটি কল রেকর্ড প্রচারিত হয়। ওই অডিও সাক্ষাৎকারে তানি দাবি করেন, ‘একটি কুচক্রীমহল আমার বিরুদ্ধে মাঠে নেমেছে। তারা চিত্রনায়ক উজ্জ্বল সাহেবকে ভুল বুঝিয়েছেন। যুবলীগের নেত্রী হিসেবে একটা প্রমাণ যদি তারা দেখাতে পারে, আমি সঙ্গে সঙ্গে পদত্যাগ করব। শুধু তাই না, আওয়ামী লীগের আমলে লীগের থেকে নেওয়া কোনো সুবিধা কিংবা অনুদান অথবা সরকারি ন্যূনতম সুযোগ-সুবিধা নেওয়ার প্রমাণও কেউ দেখাতে পারবে না। আওয়ামী লীগের দলীয় কোনো আয়োজনে কখনো অংশ নেওয়ার প্রমাণ কেউ দেখাতে পারবে না।’
তানি বলেন, ‘আমি চারুকলায় পড়াশোনা করেছি। স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন আওয়ামী লীগের কোনো আয়োজনে অংশ নেইনি। বরং আমার পরিবার আওয়ামীবিরোধী রাজনীতির সঙ্গে বহু আগে থেকে সম্পৃক্ত।’
সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, এফডিসির এমডির মতো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারের একাধিক গোয়েন্দা বাহিনী দিয়ে তদন্ত করে তার পরেই নিয়োগ দেওয়া হয়। মাসুমা রহমান তানির গোয়েন্দা প্রতিবেদন পজিটিভ। তার সঙ্গে আওয়ামী সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ তারা পায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের ওই সূত্র আরও জানায়, মৃতপ্রায় এফডিসি ও চলচ্চিত্র শিল্পকে জাগ্রত করতে বর্তমান সরকার বেশকিছু মেগা প্রজেক্ট হাতে নিয়েছে। সেসব প্রজেক্ট থেকে সুবিধা নিতে একটি মহল নিজেদের ভেতর থেকে এফডিসির এমডি নিয়োগের জন্য চাপ প্রয়োগ করে। কিন্তু এখন এফডিসির দায়িত্ব একজন আধুনিকমনা, বুদ্ধিদীপ্ত তরুণের হাতে থাকা প্রয়োজন। সেই ভাবনা থেকে তানিকে বিবেচনা করা হয়েছে।
এফডিসির এমডি নিয়োগ নিয়ে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জুরি বোর্ডের সদস্য ও বর্ষীয়ান চলচ্চিত্র নির্মাতা সাঈদুর রহমান সাঈদ বলেন, ‘চলচ্চিত্রের এই সংকটকালে আমাদের দরকার ছিল একজন স্মার্ট তরুণ তুর্কির; যিনি তার আধুনিক চিন্তা-চেতনা দিয়ে চলচ্চিত্রের পুরোনো জৌলুস ফিরিয়ে আনবেন। আমাদের চলচ্চিত্র বিশ্বের সঙ্গে তাল মেলাতে গেলে এই সেক্টর ঢেলে সাজাতে হবে। আশা করি নতুন এমডি তার মেধা ও শ্রম দিয়ে চলচ্চিত্রকে জাগিয়ে তুলবেন। তানিকে অভিনন্দন।’
মাসুমা রহমান তানির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও তার এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তানির পরিবার বহু আগে থেকে ডানপন্থি ও আওয়ামীবিরোধী রাজনীতির নেতৃত্ব দিয়ে আসছে।
প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী আজ (রোববার) থেকে অফিস শুরু করবেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সাবেক নির্বাহী সদস্য মাসুমা রহমান তানি।
No comments:
Post a Comment